ইন্টার মিলানের কাছে হারলো বার্সেলোনা
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স ফুটবল লিগে ইন্টার মিলানের কাছে হারলো স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা। গতরাতে ‘সি’ গ্রুপের ম্যাচে ইন্টার মিলান ১-০ গোলে হারিয়েছে বার্সেলোনাকে। ম্যাচের প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে একমাত্র গোলটি করেছেন ইন্টারের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হাকান চাহানোগ্লু। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচের ১টিতে জয় পেয়েছে এবং একটিতে পরাজিত হলো বার্সেলোনা। এই অবস্থা ছিলো ইন্টার মিলানেরও। তাই গ্রুপে প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে দু’দলের জন্যই জয়টা গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। তবে দারুন আত্মবিশ^াসী হয়েই ইন্টার মিলানের মুখোমুখি হয় বার্সেলোনা। স্প্যানিশ লিগে টানা ছয় ম্যাচ জিতে আত্মবিশ^াসে ভরপুর ৭ ম্যাচে ৬ জয় ও ১ ড্রতে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে গোল গড়ে এগিয়ে টেবিলের শীর্ষে বার্সা। অপরদিকে, মৌসুমের শুরু থেকেই ছন্দহীন ইন্টার মিলান। সিরি এ’ তে ৮ ম্যাচে সমান ৪টিতে জয়-হারে টেবিলের নবমস্থানে ছিলো মিলান। কিন্তু নিজেদের মাঠে বার্সাকে বড় ধাক্কা দিলো ইন্টার মিলান।
নিজ মাঠ সান সিরোতে শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারতো ইন্টার মিলান। চতুর্থ মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে বল পেয়ে বার্সেলোনার সীমানায় প্রবেশ করে গোলবার লক্ষ্য করে শট নিয়েছিলেন মার্টিনেজ। কিন্তু সেটি রুখে দেন বার্সার গোলরক্ষক আন্দ্রে টার স্টেগান। সপ্তম মিনিটে বার্সেলোনাকে আবারও রক্ষা করেন স্টেগান। ৩০ গজ দূর থেকে চাহানোগ্লুর জোড়ালো শট লাফিয়ে এক হাত দিয়ে ক্রসবারের উপর দিয়ে পাঠিয়ে দেন বার্সার গোলরক্ষক। প্রথম ১০ মিনিটে ইন্টার মিলান আধিপত্য বিস্তার করলেও, প্রথমার্ধের পরের সময়গুলোতে বল দখলে রাখে বার্সেলোনা। কিন্তু নিজেদের ভুলে ও ইন্টার মিলানের রক্ষণভাগের দৃঢ়তায় গোল পায়নি বার্সা। তবে ২৮ মিনিটে গোল পেয়েছিলো ইন্টার মিলান। ডান-প্রান্ত দিয়ে ডারমিইনের দেয়া পাস থেকে বল পেয়ে বার্সার গোলরক্ষককে কাটিয়ে বল জালে পাঠান স্ট্রাইকার হোয়াকিন কোররেয়া। কিন্তু সেটি অফ-সাইডে বাতিল হয়। এমন অবস্থায় গোলশূন্যভাবে প্রথমার্ধ শেষ হবার পথেই ছিলো। কিন্তু প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে ইন্টার মিলানকে গোলের আনন্দে মাতান চাহানোগ্লু।। লটারো মার্টিনেজের শট বার্সেলোনা ডিফেন্ডারের কাছ থেকে পয়ে ২৫ গজ দূর থেকে নিখুঁত শট নেন গোল করেন তুর্কি মিডফিল্ডার চাহানোগ্লু।
ফলে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে ইন্টার মিলান। গোল পরিশোধের জন্য দ্বিতীয়ার্ধে মরিয়া হয়ে উঠে বার্সেলোনা। ম্যাচের ৫৫ মিনিটে ইন্টার মিলানের ডি-বক্স থেকে আড়াআড়ি শট নিয়েছিলেন ওসমানে ডেম্বেলে। সেটি প্রতিপক্ষের বার ঘেষে চলে যায়। আর ৬১ মিনিটে আবারও দুভার্গ্যরে শিকার হন ডেম্বেলে। তার নেয়া শট ইন্টারের গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনাহার হাত ঘেষে বারে বল লাগে। ফলে এবারও গোল বঞ্চিত হয় বার্সেলোনা। ৬৬ মিনিটে ইন্টার মিলানের জালে বল পাঠান বার্সেলোনার পেড্রি। কিন্তু পেড্রির গোলের আগে বল বার্সার মিডফিল্ডার আনসু ফাতির হাতে বল লাগায় সেই গোল বাতিল করেন মাঠের রেফারি। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, বল ইচ্ছাকৃত হাতে লাগাননি ফাতি। আর শেষদিকে, ৯১তম মিনিটে ইনজুরি সময়ে পেনাল্টি বঞ্চিত হয় বার্সেলোনা। ডি-বক্সে ইন্টারের ডিফেন্ডার ডামফ্রিসের হাতে বল লাগলেও পেনাল্টির আবেদন করে বার্সেলোনা। কিন্তু ভিএআর দেখে মাঠের রেফারি স্লাভকো ভিনচিচ বার্সার পেনাল্টির আবেদন বাতিল করে দেন। ফলে হারের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বার্সেলোনাকে।
তবে এমন হারকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না বার্সেলোনার কোচ জাভি হার্নান্দেজ। তার মতে, দু’টি গোল থেকে বার্সাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। একটি গোল ফাতির হাতে লাগার কারণে বাতিল করে। অন্যটি, শেষদিকে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের হাত বল লাগলে, তা ভিএআর দেখে পেনাল্টি দেননি রেফারি। এই দু’টি সিদ্বান্ত বার্সেলোনার পক্ষে আসলে, জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারতো দল বলে মনে করেন হার্নান্দেজ। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে আছি। রেফারির এমন ভুল কিভাবে মেনে নেয়া যায়। ফাতি ইচ্ছাকৃতভাবে হ্যান্ডবল করেনি। তাই এটি গোল ছিলো। কিন্তু বাতিল করা হলো। আরেকটিও সিদ্বান্তও আমাদের বিপক্ষে গেল। প্রতিপক্ষের ডামফ্রিসের হাতে বল লেগেছিলো। আমরা পেনাল্টি পেয়েছিলাম। আমাদের সাথে অবিচার করা হলো। এগুলো কেন হলো, বুঝতে পারছি না। রেফারির উচিত এসব সিদ্বান্তের ব্যাখা দেয়া। যদি তিনি ভুল করেন বা না করেন। আজ আমি সত্যিই অখুশি।’
এই গ্রুপে ৩ ম্যাচের সবগুলোতে জিতে ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে বায়ার্ন মিউনিখ। ৩ খেলায় ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয়স্থানে ইন্টার মিলান ও সমান ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে বার্সেলোনা তৃতীয়স্থানে। ৩ খেলার কোন জয় পায়নি গ্রুপের আরেক দল ভিক্টর প্লজেন।