জনগণকে সচেতন হতে হবে
সড়ক দুর্ঘটনা
আইনের কঠোর প্রয়োগ ও শৃঙ্খলার অভাবে দেশের সড়ক-মহাসড়কে প্রতিদিনই ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এ বিষয়ে বহুল আলোচিত সমস্যাগুলোর সমাধানে কর্তৃপক্ষের জোরালো তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। বর্তমানে সড়ক-মহাসড়কে চলাচল এতটাই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে যে, একজন যাত্রী ঘর থেকে বের হওয়ার পর ঘরে ফেরা পর্যন্ত স্বজনদের উৎকণ্ঠায় থাকতে হয়। বস্তুত দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোয় এখন চলছে রীতিমতো মরণখেলা। একটি সংগঠনের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৬ জন নিহত ও ৭৯৪ জন আহত হয়েছেন। অর্থাৎ দিনে গড়ে ১৫ দশমিক ৮৬ জন নিহত হন। নিহতদের ৩৫ শতাংশের বেশি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হন। এছাড়া দুর্ঘটনার শিকার ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ কর্মক্ষম ছিলেন। এ সময় ৯টি নৌ দুর্ঘটনায় ৭৮ জন নিহত ও তিনজন নিখোঁজ হন। ২১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত ও ছয়জন আহত হন। ঢাকায় ২৯টি দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত ও ৩৭ জন আহত হয়েছেন।
নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন প্রতিবেদনটি তৈরি করে। এতে বলা হয়, আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১৯ জন নিহত হয়েছিল। এ মাসে গড়ে প্রতিদিন ১৬ দশমিক ৭৪ জন নিহত হয়। সেপ্টেম্বরে প্রাণহানি কিছুটা কমেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়- দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে প্রায় ৩৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩৮ দশমিক ৮২ শতাংশ আঞ্চলিক সড়কে, ১৮ শতাংশ গ্রামীণ সড়কে, ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ শহরে এবং ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ অন্যসব স্থানে ঘটেছে। উদ্বেগজনক হলো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক-ইউটিউবে দর্শক বাড়াতেও চলছে গতির প্রতিযোগিতা। মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ছাড়াও দূরপাল্লার বাসের চালক-হেলপারদের নামানো হচ্ছে এসব প্রতিযোগিতায়। রেসের ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়ে একশ্রেণির তরুণ আর্থিকভাবে লাভবান হলেও চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন যাত্রীরা।
এ ধরনের অরাজকতা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। দেশের সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কাজটি কঠিন। তবে সংশ্লিষ্টরা পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে আশা করা যায়, দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে। যানবাহনের লাইসেন্স প্রদানে যাতে কোনোরকম দুর্নীতি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। সড়ক-মহাসড়ক ত্রুটিমুক্ত করতেও নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনের প্রয়োগ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ চালক এবং সড়কে চলাচল উপযোগী ভালো মানের যানবাহন অবশ্যই প্রয়োজন। ট্রাকসহ পণ্যবাহী দ্রুতগতির যানবাহন ও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা মোটেও কমছে না। মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ চালকদের বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোয় দুর্ঘটনা বাড়ছে। এজন্য গণপরিবহন সহজ, সাশ্রয়ী ও উন্নত করা এবং যানজট কমিয়ে মোটরসাইকেল নিরুৎসাহিত করতে হবে। একই সঙ্গে জনগণকেও সচেতন হতে হবে।