ঝুঁকি মোকাবিলায় অগ্রিম পদক্ষেপ জরুরি
বর্তমান প্রবৃদ্ধির কাঠামো টেকসই নয় উল্লেখ করে বিশ্বের শীর্ষ প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর মতো বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধির কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে বলে মত দিয়েছে বিশ^ব্যাংক। নতুন করে সংস্কার না হলে ২০৩৫ থেকে ২০৩৯ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের নিচে নেমে যেতে পারে। গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন অগ্রগতির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে এবং একই সঙ্গে প্রবৃদ্ধির হারকে ত্বরান্বিত করতে একটি শক্তিশালী সংস্কার এজেন্ডা প্রয়োজন বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির জন্য তিনটি বাধা চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক। সেগুলো হলো- বাণিজ্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস, দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ আর্থিক খাত এবং ভারসাম্যহীন ও অপর্যাপ্ত নগরায়ণ। এ তিন বাধা দূর করতে পারলে উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে এবং ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধি আরও টেকসই হবে বলে মন্তব্য করেছে বিশ্বব্যাংক। ‘চেঞ্জ অব ফেব্রিক’ নামের এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকের এ পর্যবেক্ষণের বিষয়গুলো উঠে আসে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কয়েক দশক ধরে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি সেরা প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশগুলোর একটি হলো বাংলাদেশ। কিন্তু এতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কারণ নেই। অর্থনীতির তেজিভাব কখনো স্থায়ী প্রবণতা নয়। দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি সবসময় উচ্চঝুঁকিতে থাকে। তবে, কয়েকটি দেশ দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। শীর্ষ ১০-এ থাকা দেশগুলোর মাত্র এক-তৃতীয়াংশ দেশ পরের দশকেও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। গত এক দশকে (২০১০-১৯) যেসব দেশ শীর্ষ ১০-এ ছিল, সেসব দেশ আগের দশকে শীর্ষ ১০-এ ছিল না। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বিশ্বব্যাংক কিছু সুপারিশ করেছে। যেমন- রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের শুল্ক-করহার অন্য দেশের তুলনায় বেশি, যে কারণে বাণিজ্য সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ব্যাংকখাত সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক বলছে, ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকখাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। কিন্তু দেশের আর্থিকখাত এতটা গভীর নয়। গত চার দশকে আর্থিকখাতের উন্নতি হলেও এখনো তা পর্যাপ্ত নয়। অন্যদিকে, আধুনিক নগরায়ণই বাংলাদেশের পরবর্তী ধাপের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভারসাম্যপূর্ণ আধুনিক নগরায়ণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। অন্যদিকে প্রায় একই রকম একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যা সামনের দিনগুলোতে দেশের অর্থনীতিতে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের চাপ আরও বাড়বে। এর প্রভাবে বাড়বে মূল্যস্ফীতির চাপ। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে সরকারের খরচ বেড়ে যাবে। এটি সংকটকে আরও প্রকট করে তুলতে পারে। রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হওয়ায় ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতির উচ্চগতি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যা ডলারের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আগামীতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি আরও কমতে পারে। কারণ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে অনেক দেশ এখন সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। বস্তুত বৈশ্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়-দিন যত যাচ্ছে, সংকট তত ঘনীভূত হচ্ছে। দেশেও পড়ছে এর প্রভাব। এ সংকট সাধারণ মানুষের জীবনে নিয়ে এসেছে দুর্ভোগ। দ্রব্যমূল্য বাড়ছে একদিকে, অন্যদিকে কমে যাচ্ছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। ওদিকে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না, টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে পুরোনোগুলেও। তাই আগামীতে দেশের অর্থনীতিকে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখন থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া গেলে তা সংকট উত্তরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।