রবিউল আউয়ালের ফজিলত
এফএনএস ধর্মপাতা: ‘রবিউল আউয়াল’ ইসলামি বর্ষপঞ্জির তৃতীয় মাস। এটি অন্যান্য মাস থেকে বেশি গুরুত্ব বহন করে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই মাসেই জন্মগ্রহণ করেছেন এবং এই মাসেই তিনি ইন্তেকাল করেন। নবিজি (সা.) জন্মগ্রহণের কারণে যেমন এই মাসের ফজিলত বেড়েছে, ঠিক তেমনি ফজিলত বেড়েছে সোমবার দিনেরও। হাদিস শরীফে এসেছে, আবু কাতাদা আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘সোমবারের রোজা সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি, আর এই দিনেই আমাকে রাসুল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে (কিংবা তিনি বলেছেন) এই দিনেই আমার ওপর (প্রথম) ওহী নাজিল করা হয়েছ’ (মুসলিম: ১১৬২, আবু দাউদ: ২৪২৬)। রবিউল আউয়াল মাসকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে বিভিন্ন আয়োজন। আল্লাহর বড় ধরনের কোনো নেয়ামতের স্মরণে আনন্দ প্রকাশ খারাপ জিনিস নয়। তবে এগুলো শরীয়তের গ-ির ভেতরে হওয়া আবশ্যক। এ সম্পর্কে নবিজি (সা.) বলেন, ‘আমাদের শরীয়তে নেই এমন বিষয় যারা আবিষ্কার করে তারা আমাদের দলভুক্ত নয়’ (বোখারি : ২৬৯৭)।
কোরআন হাদিসে এই মাসের জন্য আলাদা কোনো আমলের বর্ণনা পাওয়া যায় না। তাই নিজেদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আমলের বর্ণনা দেওয়া শরীয়তে বাড়াবাড়ি এবং হারাম কাজ। তবে নবিজির সিরাত আলোচনা করা একটি বড় ইবাদত। এমনকি এটি ঈমানের অংশও বটে।
নবিজি (সা.)-এর জন্মের ঘটনার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হলো তার জীবনাদর্শের অনুসরণ। যেমন- নবিজির জন্ম, শৈশব, নবি হিসেবে প্রেরণ, দাওয়াত, জিহাদ, ইবাদত, আখলাক-চরিত্র, নীতি-নৈতিকতা, তাকওয়া-তাহারত, দয়া-ভালোবাসা, রাগ-ক্রোধ, হাসি, ওঠা-বসা, হাঁটা, ঘুম-জাগরণসহ যাবতীয় চালচলন ইত্যাদি মুসলিম উম্মাহর সামনে উপস্থাপন করা। এগুলো সামনে রেখে আলোচনাসভার অয়োজন করা, অবশ্যই ভালো এবং প্রশংসনীয় কাজ। রবিউল আউয়াল মাসে ইসলাম সমর্থন করে না এমন কাজে মেতে না উঠে এগুলো করা যেতে পারে। এ ছাড়াও প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিজের তিনটি রোজা রাখার কথা এসেছে হাদিসে।
এর প্রতি যতœশীল হওয়া যেতে পারে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আ’মর ইবনে আ’স (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি মাসে তিনটি করে সিয়াম পালন, সারা বছর ধরে সিয়াম পালনের সমান’ (বোখারি: ১১৫৯, ১৯৭৫)। আর প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার অভ্যাস করা। রাসুল (সা.) এ দুই দিন বিশেষ রোজা রাখতেন। এ বিষয়ে নবিজি (সা.) বলেন, ‘বৃহস্পতি ও সোমবার আল্লাহতায়ালার সামনে বান্দার আমল উপস্থাপন করা হয়, তাই আমি চাই- আমার আমল পেশ করার সময় আমি যেন রোজা অবস্থায় থাকি’ (সুনানে নাসায়ী: ২৩৫৮)। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকাল দিবস কামনা করে, তাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ’ (সূরা আল-আহজাব: ২১)।