হাসপাতালের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে
খবরে প্রকাশ, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগত রোগী ও স্বজনদের জিম্মি করে বকশিশের নামে ছয়-সাত গুণ বেশি ভর্তি ফি আদায় এবং মোটা অঙ্কের বকশিশের বিনিময়ে ট্রলিতে রোগীদের বহন করে থাকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের একটি সিন্ডিকেট। এমনকি লাশ নামাতেও জোর করে টাকা আদায়সহ নানান অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তাই গত ২৭ সেপ্টেম্বর হাসপাতালটির ১৬ কর্মচারীকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে বিভিন্ন হাসপাতালে বদলি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আরো ৭৫ জনকে বদলির প্রক্রিয়া চলছে।তবুও হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে গত ২৯ সেপ্টেম্বরও ‘ট্রলি বাণিজ্য’সহ বিভিন্ন অপকর্ম অব্যাহত ছিল। হাসপাতালের পরিচালক জানান, এখানে সকল ক্ষেত্রেই অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে। চেইন অব কমান্ড নেই। এ অবস্থা শুধুমাত্র ওই হাসপাতালেই নয়,এরূপ অপকর্ম চলছে কম-বেশি সরকারি সব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রেই।উপরন্তু অনেক ডাক্তার,নার্স,টেকনিশিয়ানসহ বিভিন্ন পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন যাবত।সর্বোপরি চিকিৎসার মান খারাপ।পরিচ্ছন্নতা ও নিরিবিলি পরিবেশেরও অভাব রয়েছে।
ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার কারণে অনেক রুগী মারাও যান।তাই সামর্থ্যবানরা দেশের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার করান।কিন্তু সেখানে ব্যয় অত্যধিক।উপরন্তু অনেকগুলো অবৈধ।তাই এর বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এ অবস্থায় ধনীরা বিদেশে চিকিৎসা করান।তাতে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়।জানা মতে, ২০২১ সালে যেসব মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে বিদেশে গেছে, তাদের শুধু চিকিৎসা ব্যয়ই হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।উপরন্তু তাদের ভ্রমণ, থাকা, খাওয়া ও আনুষঙ্গিক ব্যয়ও রয়েছে।অপরদিকে,গরীব মানুষরা সামর্থ্য না থাকায় বাধ্য হয়ে সরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসা করান।কিন্তু সেখানেও অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ব্যয় অনেক।ফলে চিকিৎসা ব্যয় মিটাতে গিয়ে দেশে অনেক মানুষ দরিদ্র হচ্ছে প্রতিবছর। এছাড়া, চিকিৎসা ব্যয় মিটাতে না পেরে অনেকেই বিনা চিকিৎসাতেই থাকছেন!
সুচিকিৎসা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার।তাই দেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নীতি গ্রহণ করেছেন সরকার।কিন্তু সরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, জনবলের স্বল্পতা এবং অস্বাস্থ্যকর ও প্রতিকূল পরিবেশ বজায় রেখে ওই নীতি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই সরকারী সব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সব অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ,সব শূন্য পদ পূরণ এবং সার্বক্ষণিক পরিস্কার ও নিরিবিলি পরিবেশ রাখতে হবে।
স্মরণীয় যে,দেশের স্বাস্থ্য অবকাঠামো এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সেরা।কিন্তু প্রশাসনিক দুর্বলতা,অদক্ষতা ও জনবলের সংকটের কারণে তার সুফল মিলছে না।ফলে দেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে,করোনার ন্যায় নানা সংক্রমণ ব্যাধি নিত্য নতুন সৃষ্টি হয়ে বিশ্বে মহামারি হচ্ছে।যার সুচিকিৎসার জন্য দেশে দক্ষ চিকিৎসকের অভাব রয়েছে।উপরন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরও অনেক অভাব রয়েছে দেশে।এসব ঘাটতি পূরণ করতে হবে। সে জন্য অনেক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।বর্তমানে বহু দেশে রোগ প্রতিকারের চেয়ে রোগ প্রতিরোধের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বেশি। এটা আমাদের দেশেও করতে হবে। অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার ও ফার্মেসীর বিরুদ্ধে অভিযান এবং ভুল চিকিৎসা ও অবহেলাকারীদের শাস্তি অব্যাহত রাখতে হবে।