বিদ্যুৎ বিপর্যয় অনাকাক্সিক্ষত
হঠাৎ করে গত ৪ অক্টোবর দুপুর ২টার পর বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে। তাতে দেশের উত্তর-পশ্চিমের কিছু অংশ বাদে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের শতকরা ৮০ ভাগের বেশি এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে প্রায় ১৪ কোটি মানুষ। বিদেশী মিডিয়ায় এটাকে ব্ল্যাক আউট বলা হয়েছে। আশুগঞ্জে জাতীয় বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন গ্রিডে বিপর্যয় থেকে এ অবস্থার সৃষ্টি। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ঘরে-বাইরের প্রায় সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়। যেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে জেনারেটর নেই, সেখানেও চিকিৎসা ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। গণমাধ্যমের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, দোকান, ব্যাংকিং, শিল্প-কারখানা, অফিস-আদালত, বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন ইত্যাদিরও কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
কোথাও কোথাও মোমবাতি দিয়ে আদালতের কার্যক্রম চালানো হয়। যাদের জেনারেটর, চার্জার, চার্জার বাল্ব ছিল, তারা কিছু আলো মুখ দেখতে পেয়েছিলেন। বাকী লোকজন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিলেন। মোমবাতি দিয়ে দুধের সাধ ঘোলে মিটানোর মতো চেষ্টা করেছিলেন অনেকই। তাতেও বিপত্তি দেখা দেয়-আউট অব মার্কেট। স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাজারের সব মোমবাতি দ্বিগুণ মূল্যে বিক্রি শেষ হয়ে যায়!হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজার আনন্দ-উৎসবে বিঘœ ঘটে। বিদ্যুৎ না থাকায় বাসা-বাড়ী,অফিস-আদালাত, শিল্প-কলকারখানা, হোটেল, মসজিদসহ সর্বত্রই পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়। মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। নানা গুজবের ডালপালা বিস্তার করে। সিজিটিভি, রয়টার্স, এএফপি, আলজাজিরাসহ বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায়ও এ খবর গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়। এ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। উপরন্তু এই বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। অবশ্য, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর তদারকিতে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় সন্ধ্যার দিক থেকে কিছুকিছু স্থানে বিদ্যুৎ সঞ্চালন শুরু হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুতের ব্যাপক লোড শেডিং চলছে সারা দেশেই। তাতে মানুষের চরম ক্ষতি হচ্ছে। সর্বত্রই কাজ-কর্ম ও উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। অথচ দেশের বিদ্যুতের চাহিদার চেয়ে উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। তবুও ব্যাপক লোড শেডিংয়ের প্রধান কারণ হচ্ছে-প্রয়োজনীয় সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার অভাব। তাই চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে না। ফলে অনেক বিদ্যুৎ প্লান্টকে বসে থাকতে হচ্ছে। তবে, তারা ক্যাপাসিটি চার্জ পাচ্ছে। অন্যদিকে, গ্যাসের স্বল্পতার কারণে এলএনজি নির্ভরতা বাড়ানো হয়েছে। তাতে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। তাই ভর্তুকির পরিমাণ কমানোর জন্য বহুবার বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। যার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। তবুও সম্প্রতি এলএনজি ও কয়লার মূল্য ব্যাপক বৃদ্ধির কারণে পুনরায় বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু এখন পুনরায় বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হলে তার প্রভাব পড়বে দেশের সব ক্ষেত্রেই।
এই অবস্থায় দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিপর্যয় তথা ব্লাক আউট অনাকাক্সিক্ষত। কারণ, শঙ্কা, ভোগান্তি ও ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক। তাই এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিভাগের সব সময় সতর্ক থাকা দরকার। সর্বোপরি ওই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটি যে সুপারিশ করবে তা বাস্তবায়নের দিকে খুবই গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া,চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় সঞ্চালন ও বিতরন ব্যবস্থা,কয়লা ও এলএনজি নির্ভরতা হ্রাস ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া দরকার।