কন্যা শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত হোক

গত ৩০ সেপ্টেম্বর সারাদেশে পালিত হয়েছে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস। আর আন্তর্জাতিক ভাবে পালন করা হয় ১১ অক্টোবর। তবে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন দিনে দিবসটি পালন করে থাকে। দেশে অনেকেই সেপ্টেম্বর মাসের চতুর্থ রোববার দিনটি কন্যাশিশু দিবস বলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে স্ট্যাটাস দিতে দেখা যায়। বাংলাদেশে ২০১৩ সাল থেকে বছরের এই দিন জাতীয় কন্যাশিশু দিবস পালন করা হচ্ছে। একটি দিন শুধু কন্যা শিশুদের জন্য উৎসর্গ করা। অনেকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম গুলোতে স্ট্যাটাস দিয়েই কন্যাশিশু দিবস পালন করছেন। দেশে বিভিন্ন আয়োজন ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়। বিভিন্ন আনুষ্ঠানে কন্যা শিশুদের প্রতি বৈষম্য দেখানো চলবে না, তাদের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করার আহ্বান থাকবে।
কানাডা প্রথম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস পালনের প্রস্তাব দেয়। পরে ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর তারিখে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় এ প্রস্তাব গৃহীত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস পালন করা হয়। প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল বাল্য বিবাহ বন্ধ করা। পৃথিবীজুড়ে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে এ দিবসটি পালন করা।
সারাবিশ্বেই নানা কারণে কন্যা শিশুরা বেশ অবহেলিত। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মর্যাদা, ভালোবাসা সব দিক থেকেই বলতে গেলে তারা বঞ্চিত। শুধু যে আমাদের দেশের চিত্র এমন তা কিন্তু নয়। সারাবিশ্বেই কোনো না কোনো জায়গায় প্রতি মুহূর্তে অবহেলার শিকার হচ্ছে কন্যা শিশু। পরিবার ছাড়াও সামাজিকভাবেও তারা হচ্ছে বিভিন্নভাবে নির্যাতিত। সামাজিক, রাজনৈতিক কর্মক্ষেত্র সহ সমস্ত স্থানে নারী পুরুষের ভেদাভেদ দূরীকরণ হলো কন্যাশিশু দিবস অন্যতম উদ্দেশ্য। গৃহ পরিবেশে একজন পুত্র সন্তানকে যেভাবে গুরুত্ব সহকারে আদর-যতেœ লালন-পালন, শিক্ষার প্রতি যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেভাবেই একজন কন্যা শিশুর মানসিক নিপীড়নের হাত থেকে মুক্ত করাই হল কন্যাশিশু দিবসের অন্যতম উদ্দেশ্য।
২০১১ সালে জাতিসংঘ কন্যাশিশু দিবসের ঘোষণা দেওয়ার পর ২০১২ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস পালন করা হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯৭৪ সালে প্রথম শিশু আইন প্রণয়ন করেন। এর ১৫ বছর পরে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের ঘোষণা দেয়। এর পরের বছর বাংলাদেশ সেই সনদে সই করে। কন্যা শিশুদের শিক্ষার অধিকার, পরিপুষ্টি, আইনি সহায়তা ও ন্যায় অধিকার, চিকিৎসা সুবিধা ও বৈষম্য থেকে সুরক্ষা, নারীর বিরুদ্ধে হিংসা ও বলপূর্বক বাল্যবিবাহ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে এ দিবসের সূচনা হয়।।
বিশ্বজুড়ে নারী ও কন্যা শিশুদের প্রতি অব্যাহত সহিংসতা ও নৃশংসতার ঘটনা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ শিশু, যাদের বয়স আঠারো বছরের কম। আর শিশুদের মধ্যে ৪৮শতাংশ কন্য শিশু য়াদের পিছনে রেখে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। কন্যা- জায়া- জননীর বাইরেও কন্যাশিশুর বৃহৎ জগত রয়েছে। স্বাধীনভাবে নিজের মতামত ব্যক্ত করা ছাড়াও পরিবার, সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রীয় কর্মকা-ে নারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের প্রকৃত ক্ষমতায়ন করা সম্ভব। এজন্য কন্যাশিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তাসহ বেড়ে ওঠার সব অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
কন্যা শিশু সুরক্ষা পেলে সব বৈষম্য দূর হবে। কন্যা শিশুদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাফল্য অর্জন করেছে। বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে নেওয়া হয়েছে কঠোর আইন। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার অনেক কমে গেছে। অভিভাবকদের সবচেয়ে বেশী সোচ্চার হতে হবে কন্যা শিশুদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। কন্যা শিশুর অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে পুরুষের অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে হবে।
লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট
তথ্য জানা সবার অধিকার
প্রকাশ ঘোষ বিধান
তথ্য জানার অধিকার সবার। ২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস। প্রতি বছর ভিন্ন ভন্ন প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। এদিকে তথ্য কমিশন দিবসটি পালনের জন্য বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশ, সংবাদ সম্মেলন এবং টেলিভিশন ও বেতারে টক শো প্রচার। ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে প্রতিবছর ২৮ শে সেপ্টেম্বর দিবসটি পালিত হয়। দিনটি ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে উদ্বোধন করা হয়েছিল এবং ২৮ শে সেপ্টেম্বর ২০১৬ এ প্রথম দিবসটি পালিত হয়।
তথ্য জানার অধিকারের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর দিবসটি পালন করা হয়। ২০১৫ সালে ইউনেস্কোর নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম তথ্য অধিকার দিবস পালন করা হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সেবা বিস্তৃত হওয়ায় ডিজিটাল বৈষম্যের কারণে কেউ যেন পিছিয়ে না থাকে, সে বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে ইউনেস্কো। দিবস পালন উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ নং অনুচ্ছেদে জনগণের চিন্তা, বিবেক ও বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। জনগণের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে তথ্য জানার অধিকারকে প্রাধান্য দিয়েই প্রণয়ন করা হয়েছে ‘তথ্য অধিকার আইন ২০০৯’।এর যথাযথ বাস্তবায়নে ‘তথ্য কমিশন’ গঠন করা হয়েছে। তথ্য অধিকার আইনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার পাশাপাশি এ আইনের যথাযথ প্রয়োগে তথ্য কমিশন আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। জনগণের তথ্য জানার অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণকে তথ্য অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে এবং তথ্য সেবা নিশ্চিত করতে তথ্য কমিশন অনলাইন প্রশিক্ষণ ও অনলাইন ট্র্যাকিং সিস্টেম কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এর ফলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সুফল ভোগ করতে পারছে। তথ্য জানার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারছে। সারা দেশে প্রায় সব ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তোলার মাধ্যমে তথ্যসেবা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তবতা,আর স্বপ্ন নয়।
নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এবং এর আওতায় তথ্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। যার ফলে জনগণ ও গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রাপ্তির অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি ওয়ার্ল্ড এবং সংসদ টেলিভিশনের পাশাপাশি ৪৫টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং ২৮টি এফএম বেতার কেন্দ্র এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও সম্প্রচার করছে। ফলে তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা সহজতর হয়েছে। সংসদ টেলিভিশন চালুর ফলে গণমানুষের কাছে সংসদের কার্যক্রম সরাসরি পৌঁছানো সহজ হয়েছে। বর্তমান সরকার নাগরিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন চালু করেছে। জেলা শহরগুলোর মধ্যে ৯৯ শতাংশ শহর ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। এখন ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম-এর মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে তথ্য আদান প্রদান করা হচ্ছে। তবে এ সমাজে তথ্য না দেওয়ার সংস্কৃতি দীর্ঘ দিনের। এ সংস্কৃতি ভাঙ্গতে হবে। গড়তে হবে অসাস্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ন্যায়বিচার ভিত্তিক ও আত্মনির্ভরশীল রাষ্ট্র।