এফএনএস:জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে দেশের প্রায় অর্ধেক অংশ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ২টা ৪ মিনিটে গ্রিডে বিপর্যয় ঘটলে পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশ বন্ধ হয়ে যায়।এরপর থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটের অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণ জানা যায়নি। তবে গ্রিডের সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাটের কারণে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ ফিরতে শুরু করে। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে সচিবালয়ের গেট, চারপাশ ও সচিবালয় চত্বরের বিদ্যুৎ সংযোগ সচল করা হয়। ওই সময় বিদ্যুৎ আসে বিদ্যুৎ ভবনেও। তখনও সচিবালয়ের ভবনগুলো ছিল বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। সন্ধ্যা ৬টা ১৪ মিনিটে সচিবালয়ের ভবনগুলোতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর সন্ধ্যার আগে বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, ন্যাশনাল গ্রিড ঠিক করতে একটু সময় লাগবে। আমার মনে হয় দু-তিন ঘণ্টার আগে হবে না, সময় লাগবে। আমরা রিকভার করার জন্য চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, সন্ধ্যার মধ্যে আমরা চেষ্টা করছি রিকভার করার জন্য। অন্তত আমাদের যেসব সেনসেটিভ এলাকা আছে, কেপিআইভুক্ত, ওইগুলো আমরা স্টার্ট (বিদ্যুৎ সরবরাহ) করে দেবো। এদিকে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের ঘটনা খতিয়ে দেখতে বিদ্যুৎ বিভাগকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী। বিপু জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের একটি এবং তৃতীয়পক্ষের একটি কমিটি বিভ্রাটের কারণ খুঁজে বের করতে কাজ করবে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে দেশের সড়ক, মহাসড়ক ও বাসাবাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। মানুষের জানমালের নিরাপত্তাও চলাচল নির্বিঘেœ করতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। সড়কে সিসি ক্যামেরা ও গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে জেনারেটরের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
রাজধানীসহ পুলিশের প্রতিটি মেট্রোপলিটন এলাকায় টহল বাড়ানো হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তাএই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রাজধানীর সকল থানাকে বিভিন্ন অলিগলিতে টহল টিম বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। সড়কে ছিনতাই প্রতিরোধে মোটরসাইকেলে টহল, সাদা পোশাকে পুলিশ দায়িত্ব পালন করে। বিদ্যুৎ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানানো হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক মনজুর রহমানবলেন, সবাই সতর্ক রয়েছেন। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা যা প্রয়োজন পুলিশের সকল ইউনিট তা করবে। এদিকে সড়কে টহল বৃদ্ধি করে র্যাব। দেশের সবগুলো ব্যাটালিয়ন নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে। র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈনবলেন, আমাদের সদস্যরা নাগরিকদের নিরাপত্তায় সবসময় তাদের পাশে আছে। একদিকে পূজার নিরাপত্তা অন্যদিকে চলাচলের ক্ষেত্রে নগরবাসীর নিরাপত্তা, সব মিলিয়ে বাড়তি চাপ পড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর। নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ দেয় ডিএমপি। গতকাল মঙ্গলবার দুর্গাপূজা উদযাপনের নবমীর আনুষ্ঠানিকতা চলে। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকার কারণে বিকাল থেকে অনেক পূজাম-পে ছিল না ঢাক ঢোলের আওয়াজ।
ভক্ত দর্শনার্থীরা পূজাম-পের ভক্তির জন্য এলেও দ্রুত অবস্থান ত্যাগ করেন। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক বলেন, দুপুর ২টার পর থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক ম-পে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আমার সব জায়গায় বলেছি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আলোর ব্যবস্থা করতে। যদিও এটি একটি জাতীয় সমস্যা। আমরা চাই তাড়াতাড়ি বিদ্যুৎ সমস্যা কাটিয়ে পুরোদমে সব জায়গায় বিদ্যুৎ স্বাভাবিক হোক। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার ক্রাইম এ কে এম হাফিজ আক্তারবলেন, পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকার জন্য বলা হয়েছে। পূজাম-পের নিরাপত্তা বিষয়ে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। কোনো পূজাম-প যেন বিদ্যুৎবিহীন না থাকে সে বিষয়েকর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ডিএমপি গণমাধ্যম শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার ফারুক হোসেনবলেন, নগরবাসীর চলাচলের বিষয়েও সড়কে পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।