আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিবেদন থেকে চলমান বৈশ্বিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বেকারত্ব বৃদ্ধির পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। সংস্থাটি বলেছে, আগামী বছরেও বিশ্বের প্রায় সব দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমবে। মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। মুদ্রা ব্যবস্থাপনার অস্থিরতায় সুদের হার বেড়ে গিয়ে বিশ্বব্যাপী বৈদেশিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশসহ অনেক দেশে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়া মানে কর্মসংস্থানের গতি হ্রাস পাওয়া। অর্থাৎ বেকারত্ব আরও বেড়ে যাওয়া। এমনিতেই দেশে কর্মসংস্থান পরিস্থিতি ভালো নয়। চাকরির বাজার খুবই সীমিত। বিশেষত শিক্ষিত যুবক শ্রেণি কোনোমতে খেয়েপরে বাঁচার মতো একটি কাজ না পেয়ে যখন তীব্র হতাশায় নিমজ্জিত, এমনকি চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যার নজিরও আছে, তখন আইএমএফের এ প্রতিবেদন আমাদের জন্য একটি দুঃসংবাদ বৈকি। এ পূর্বাভাস মাথায় রেখে আমাদের এখন থেকেই উচিত সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া, অর্থাৎ দেশে যাতে নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র গড়ে ওঠে সেই পদক্ষেপ নেওয়া। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও অর্থনৈতিক কর্মকা- স্থবির হয়ে পড়ায় অনেক কলকারখানা, ছোট-বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে দেশে বেকারত্ব বেড়েছে।
এ ছাড়া দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করা এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করা শ্রমিকদের কর্মহীনতার বিষয়টিও উল্লেখযোগ্য। এ পরিস্থিতি থেকে দেশ যখন উত্তরণের চেষ্টা করছিল, তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও অন্যান্য কারণে দেখা দিয়েছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট। এ সংকট মোকাবিলায় আমাদের সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে, বেকারত্ব বাড়লে তা সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। সে পরিস্থিতি কারও জন্যই সুখকর হবে না। কাজেই কী করে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায়, সেই কর্মপন্থা বের করতে হবে অর্থনীতিবিদ, শিল্পোদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞদের। বর্তমানে আমাদের কর্মসংস্থানের একটি বড় অংশজুড়ে আছে বৈদেশিক শ্রমবাজার। কিন্তু বৈশ্বিক সংকট আরও তীব্র হলে এর প্রভাব থেকে আমাদের বৈদেশিক শ্রমবাজারগুলোও মুক্ত থাকবে না।
সেক্ষেত্রে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগও সীমিত হয়ে পড়তে পারে। অনেক কর্মী কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে আসতে পারে। এসব বিষয় অনুধাবন করে আমাদের উচিত অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। দেশের বাইরে থেকে বেকার হয়ে ফিরে আসা শ্রমিকদের কর্মসংস্থান তৈরি, দেশের ভেতরে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উভয় খাতের শ্রমিকদের সুরক্ষায় সব পক্ষকে সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দেশে নতুন উদ্যোক্তা তৈরির বিষয়ে জোর দিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা কাম্য। বস্তুত অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়িয়ে, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সবার আন্তরিক উদ্যোগে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে শ্রমিকসহ সব ধরনের পেশাজীবীর জীবিকা রক্ষার মাধ্যমে। এ লক্ষ্যে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।