রাকিন ডেভেলপমেন্টে হামলা-লুটপাটের অভিযোগ সাবেক এমডির বিরুদ্ধে

বিদেশি বিনিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠান রাকিন ডেভেলপমেন্টে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা এস এ কে একরামুজ্জামানের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুইজারল্যান্ডের নাগরিক ফাদি বিতার ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমাইয়া তাসনীনকে চার ঘণ্টা আটকে রেখে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করারও অভিযোগ এসেছে। একই সঙ্গে জোরপূর্বক রাকিন ডেভেলপমেন্টের অফিস দখল করারও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত এস এ কে একরামুজ্জামান রাকিন ডেভেলপমেন্টের সাবেক এমডি। তিনি বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। গতকাল বুধবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুইজারল্যান্ডের নাগরিক ফাদি বিতার সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) বাংলাদেশের আবাসন খাতে ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করে রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (বিডি) লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটিতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ করা হয়েছে, যেখানে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন এস এ কে একরামুজ্জামান। কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার পর পরবর্তী বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) সেটার অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু ২০০৮ থেকে ২০২২ সালে তাকে অব্যাহতির পূর্ব পর্যন্ত এ ধরনের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। তাই আইনের ধারা অনুযায়ী তার এই পদ অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়েছে। ফলে দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর ধরে অবৈধভাবে তিনি এই পদে বহাল ছিলেন। ফাদি বিতার বলেন, পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি ছাড়াই এস এ কে একরামুজ্জামান কোম্পানির সম্পত্তি বন্ধক রেখে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। তাছাড়া তিনি কোম্পানির নামে কয়েকটি অনুমোদনহীন ব্যাংক হিসাব খুলে সেগুলোতে সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।

এছাড়াও কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ‘স্টার পোরসেলিন’ কোম্পানির নামে ৭৩ কোটি ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। একরামুজ্জামান ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। এই টাকা সাতদিনের মধ্যে পরিশোধের জন্য চলতি বছরের ৩ আগস্ট তাকে একটি আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি এই নোটিশের জবাব দেননি। এমনকি একরামুজ্জামানের ১৪ বছর ধরে এমডির দায়িত্ব পালনকালে কোম্পানির কোনো লাভ দেখানো হয়নি, বরং প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে। বার্ষিক সাধারণ সভার অনুমোদন না থাকা, কোম্পানির কার্যক্রমে সন্দেহজনক অর্থ লেনদেন, কোম্পানিতে নানারকম অনিয়ম-দুর্নীতি এবং তার বিরুদ্ধে অর্থপাচার মামলার কারণে গত ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কোম্পানির ৮১তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্তক্রমে একরামুজ্জামানকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার স্থলে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ফাদি বিতারকে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে জানান তিনি। ফাদি বিতার আরও জানান, এমডির দায়িত্ব নিয়ে দেখতে পাই পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনা পরিচালক একরামুজ্জামান কোম্পানির প্রচুর পরিমাণ অর্থ নিয়ম বহির্ভূতভাবে খরচ করেছেন। কোম্পানিকে সুশৃঙ্খল ও জবাবদিহিতায় আনতে এবং এখানে গ্রাহকদের অর্থ বিনিয়োগকে নিরাপদ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করি। এতে একরামুজ্জামান নাখোশ ও ক্ষিপ্ত হন। তার অনিয়মগুলো প্রকাশ্যে আসার পর আমাকে সঠিকভাবে দায়িত্বপালনে বিভিন্ন উপায়ে বাধা দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ কে একরামুজ্জামানের নেতৃত্বে রাশেদুল আলম, আরিফুর রহমান তপন, আবদুল্লাহ কায়সার ও সোহাগসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০/৩০ জন প্রতিষ্ঠানটির মিরপুরের কার্যালয়ে হামলা চালান। এ সময় তারা এর বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাদি বিতার এবং উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমাইয়া তাসনীনকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রাকিন ডেভেলপমেন্টের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমাইয়া তাসনীন বলেন, তারা আমাদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৪ ঘণ্টা আটকে রেখে লুটপাট ও জোরপূর্বক অফিস দখল করেন। এই ঘটনার সঙ্গে নারীদের নিরাপত্তা, দেশের ভাবমূর্তি, বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশিদের নিরাপত্তার মতো বিষয় জড়িত। এ অবস্থায় এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। অবৈধভাবে ১৮৪ কোটি টাকা দুবাইয়ে পাচারের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৩ মে আকরামুজ্জামান ও তার ভাই সৈয়দ এ কে আনোয়ারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা হয়। রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা ২০১০ সালে দুবাইয়ে আল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল এবং থ্রি স্টার নামে দুটি অফশোর কোম্পানি খোলেন। পরে বাংলাদেশে ‘দুর্নীতির মাধ্যমে’ অর্জিত ১৮৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা দুবাইয়ে পাচার করেন। দুবাইয়ে ওই অর্থ উর্পাজনের কোনো উৎস তারা দেখাতে পারেননি। ওই অর্থ কীভাবে উপার্জন করা হয়েছে তার কোনো তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে নেই। দুবাইয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করার কথা তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে কখনও জানাননি বা কোনো ধরনের অনুমতি নেননি।