৭ বছর আত্মগোপনে থাকা জঙ্গি সাতক্ষীরার নুরুল আবছার কক্সবাজারে গ্রেপ্তার

অনলাইন ডেস্ক: ‘আমির হামজা ব্রিগ্রেড’ নামের একটি জঙ্গি সংগঠনকে পুনরায় সংগঠিত করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় তৎপরতা চালানো একজন শীর্ষ জঙ্গিকে র‌্যাব-১৫ এর সদস্যরা গ্রেপ্তার করেছেন। কক্সবাজার সাগর পাড়ের একটি হোটেলে অবস্থানপূর্বক জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত থাকাকালীন তিনি গ্রেপ্তার হন। মো. নুরুল আবছার হাওলাদার (৪০) নামের উক্ত জঙ্গি বেশ কিছুদিন ধরে কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন। জঙ্গি মো. নুরুল আবছার হাওলাদার সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহুনিয়া গ্রামের আক্কাছ আলী হাওলাদারের ছেলে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দীর্ঘ ৭ বছরের মধ্যে তিনি ৬ বছরই কাটিয়েছেন দেশের বাইরে। মাত্র বছর খানেক আগে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এসে আবারো কাজে লেগে পড়েন জঙ্গিপনায়।  র‌্যাব-১৫ এর সহকারি পরিচালক (মিডিয়া) ও সহকারী পুলিশ সুপার মো. বিল্লাল উদ্দিন রবিবার (৯ অক্টোবর) রাতে প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, গত শুক্রবার (৭ অক্টোবর) রাতে কক্সবাজার সাগর পাড়ের হোটেল-মোটেল জোন এলাকার একটি হোটেল কক্ষ থেকে উক্ত জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গি আবছার নিজেই তার আদ্যপান্ত র‌্যাবকে জানান। উক্ত জঙ্গি মো. নুরুল আবছার হাওলাদার র‌্যাবকে জানান, ২০১৫ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও হাটহাজারী থানায় তার বিরুদ্ধে দুইটি মামলা দায়ের করা হয়। উক্ত মামলাগুলোতে ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে চার্জশীট দেওয়া হয়েছে এবং বিজ্ঞ আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরো জানান, ২০০৯ সালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় সন্দেহভাজন কর্মকাণ্ডের জন্য পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। এক মাস পর জামিনে মুক্তি পেয়ে পরবর্তীতে তিনি শীর্ষস্থানীয় এক জঙ্গি নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় চট্টগ্রাম এলাকায় নবগঠিত জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন।

তিনি আরো জানান, ২০১৩ সালে একটি রাষ্ট্রবিরোধী স্বার্থান্বেষী মহল হেফাজত আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করার মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী জঙ্গি কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করে। এই রাষ্ট্রবিরোধী গোষ্ঠী চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানাধীন গহীন পাহাড়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে এবং হাটহাজারীতে অবস্থিত মাদ্রাসাতুল আবু বক্কর (রা.) এ রিক্রুট ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করে।

গ্রেপ্তারকৃত নুরুল আবছার মূলত এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশাসনিক কার্যক্রম অর্থায়নের হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ রিক্রুট ব্যবস্থাপনা এবং প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আনা নেওয়ার সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করতেন। পাশাপাশি তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষাসহ প্রশিক্ষণ ও অর্থ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমস্ত রিপোর্ট প্রেরণ করতেন।  পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হাটহাজারি ও বাঁশখালীতে তাদের গোপন আস্তানায় র‌্যাবের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ২৪ জন গ্রেপ্তার হন। ওই সময় গ্রেপ্তারকৃত আবছার ঢাকায় অবস্থান করায় তাকে এবং কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এই ঘটনার পর আবছার পার্শ্ববর্তী একটি দেশে আত্মগোপনে চলে যান এবং পরবর্তীতে সেখান থেকে তিনি শীর্ষস্থানীয় এক নেতার পরামর্শে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি দেশে পলায়ন করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরো জানান, দীর্ঘ ৬ বছর বিদেশে অবস্থান করার পর বছর খানেক আগে দেশে ফিরে এসে ঢাকায় আত্মগোপন করে থাকেন। দীর্ঘদিন কোর্টে উপস্থিত না হওয়াতে বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়। তিনি জানান, বিদেশে অবস্থানকালীন সময় দেশে অবস্থানরত তার পৃষ্ঠপোষকরা হুন্ডির মাধ্যমে তাকে টাকা পাঠাতো।  তিনি বিদেশ থেকে দেশে আসার পর শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশনায় আমির হামজা ব্রিগ্রেডকে পুনরায় সংগঠিত করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় তার তৎপরতা শুরু করেন। এরই প্রেক্ষিতে কিছুদিন ধরে তিনি কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন। গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গির বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তা।